মোঃ জিল্লুর রহমানঃ
গতকাল শনিবার নাট্যকার এহসানুল আজিজ বাবুকে গ্রেফতার এবং শিল্পকলা একাডেমীর পদবী থেকে বহিষ্কারের দাবীতে জনতার মানব বন্ধন ও পথ সভা অনুষ্ঠিত। এ সময় বক্তারা বলেন গত ১৭ অক্টোবর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস সহ তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ,সমন্বয়ক সার্জিস আলম ও প্রধান উপদেষ্টার সহকারী মাহফুজ আলমকে ফটোশপ করে পাকিস্তানের জিন্না টুপি পড়িয়েছে এবং তাদের রাজাকার হিসেবে আখ্যা দিয়েছে দেশ নাটক সংগঠনের সদস্য এবং প্রশিক্ষক এহসানুল আজিজ বাবু। তিনি প্রধান উপদেষ্টা সহ সমন্বয়কদের বলেছেন এরা রাজাকার, এরা স্বাধীনতা বিরোধী, আবারো ছবির নিচে লিখেছে রাজাকারদের রুখে দাঁড়ান। তার এই ধৃষ্টতাপূর্ণ ফেসবুক পোস্ট এর কারনে আপামর জনগণের কলিজাতে আঘাত লেগেছে। এখনো সাঈদ, মুগ্ধের রক্তের দাগ শুকায় নাই। তার পরেও ১৮ কোটি জনগণের সমর্থনে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা আওয়ামীলীগের দোসর ছাড়া কেউ করতে পারে না। দেশ নাটকের এহসানুল আজিজ বাবুর বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিভিন্ন ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে তার ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন উস্কানিমূলক পোস্ট করেছেন। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থী সহ, শ্রমিক কর্মচারী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সংবাদকর্মী, পুলিশ বাহিনী সহ প্রায় ১৫০০+ শহিদ হয়েছে এবং ৩১০০০+ স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থী সহ সাধারণ নাগরিক আহত হয়েছেন, বিভিন্নজন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, বিভিন্নজন দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন, এখনো অনেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। গণহত্যা, গণ গ্রেফতার, গণ মামলা, এতকিছুর মূল কারণ অবৈধ স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার। সে হাসিনা স্বৈরাচার ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে পলায়ন করেছে। এতকিছু জানার পরেও আওয়ামীলীগের কিছু পেতাত্মা এখনো দলীয় প্রভাব বিস্তার করতেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে। বাংলাদেশের একমাত্র নির্দলীয় সরকারি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এখানে সমাজের দর্পণ সংস্কৃতির চর্চা করা হয়। সেখানে তারা সাংস্কৃতির চর্চা না করে বর্তমানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক তথ্য ফেসবুকে পোস্ট করতেছে এবং শিল্পকলা একাডেমির ভিতরে কথিত কিছু আওয়ামীলীগের দালাল এখনো বাংলাদেশকে নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করতেছে। গত ২ অক্টোবর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নির্যাতিত ও গুলিবিদ্ধ ছাত্র, রিক্সা শ্রমিক, বিভিন্ন সংগঠনের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ সাধারণ নাগরিক দেশ নাটকের নাট্যকার এহসানুল আজিজ বাবুকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানায় এবং তার নাট্য দল দেশ নাটক পরিচালিত পুরান নাটক বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন বিক্ষুব্ধ সাধারণ জনগণ স্লোগান দেন। প্রসঙ্গত যারা আন্দোলনকারীর মূলে ছিল তারা কখনো নাটকটি বন্ধ করতে বলে নাই। তারা বারবার বলেছিল এহসানুল আজিজ বাবুর গ্রেপ্তার চাই এবং তাকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে বহিষ্কার চাই। এরপর শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ এসে সাধারণ আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলে তাদের আশ্বাস দেন যে অতিদ্রুতই এহসানুল আজিজ বাবুকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সদস্য সহ সকল প্রকার পদ থেকে বহিষ্কার করবেন এবং যদি কখনো শিল্পকলা একাডেমিতে আসে তাহলে তাকে প্রশাসনের হাতে তুলে দিবেন একথা সাধারণ আন্দোলনকারীদের বলে তিনি শিল্পকলা একাডেমির ভেতরে গিয়ে পুরান নাটক মাঝপথে বন্ধ করে দেন। শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালকের আশ্বাসে আন্দোলনকারীরা শিল্পকলা একাডেমির সামনে থেকে যার যার মতো করে চলে যান।
আন্দোলনকারীদের দাবি শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সহ তাদের প্রশাসন এখনো এহসানুল আজিজ বাবুর বিরুদ্ধে কোন প্রকারের ব্যবস্থা নেননি। এখন সাধারণ আন্দোলনকারীদের প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কি শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক এগুলো পরিকল্পিতভাবে ঘটাচ্ছে? অক্টোবরের ২ তারিখে পুরান নাটক বন্ধ করার জন্য কেউ বলে নাই তাহলে তারা পুরান নাটক বন্ধ করল কেন?
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আওয়ামীলীগের কিছু দোসর এখনো সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং তাদেরকে রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসেবে পরিচয় করে দিচ্ছে। গত ৮ ই অক্টোবর তারা শিল্পকলা একাডেমির সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে গ্রুপ থিয়েটারের সদস্যরা পুরান নাটক বন্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। হঠাৎ করে কিছু আগন্তক ব্যক্তি তাদের ওপর ডিম নিক্ষেপ করে দ্রুত গতিতে সেখান থেকে সরে যান। কে ডিম ছুড়ে ছিল উপস্থিত জনতাকে জিজ্ঞেস করলে তারা নির্দিষ্ট করে কারো নাম বলতে পারে নাই। এর পরে সন্ধার দিকে আরো ১৫০/২০০ জনের একটি বিক্ষুব্ধ দল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সামনে এসে তাদের প্রতিবাদ সমাবেশ বন্ধ করে চলে যেতে বলে কিন্তু তারা প্রতিবাদ সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু, সাধারণ জনগণও শিক্ষার্থীরা তাদের বলে দিয়েছিল যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সমাবেশ বন্ধ করবে না ততক্ষণ পর্যন্ত সাধারণ আন্দোলনকারীরাও তাদের স্লোগান বন্ধ করবে না এবং শিল্পকলা এলাকা ছেড়ে কোথাও যাবে না। সেখানে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং উভয়পক্ষকে শান্ত করে যার যার মতো করে পাঠিয়ে দেন। আন্দোলনকারীরা যার যার মতো করে নিজ গন্তব্য স্থলে চলে যান। গত ৮ তারিখের সন্ধ্যার ঘটনায় ৯ অক্টোবর তারিখে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সেমিনার কক্ষে সাংবাদিক সম্মেলন করে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন এবং একই সময় শিল্পকলা একাডেমীর দক্ষিণ পাশের গেটের সামনে কিছু সাধারণ জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে লিখা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে ছিল। হটাৎ করেই সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য উপস্থিত জনতাকে জিজ্ঞেস করে কিসের কারণে এখানে মানববন্ধন করতেছেন? কারো কাছ থেকে কি মানববন্ধন করার অনুমতি নিয়েছেন? আপনাদের সমন্বয়ক কে? তখন সাধারণ জনতা সেনাবাহিনীকে উত্তর দেন আমরা বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক, আমাদের কোন সমন্বয়ক নেই প্রধান উপদেষ্টাদের নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন করার কারণে আজ আমরা প্রতিবাদ করতে এসেছি। যেই ব্যাক্তি প্রধান উপদেষ্টা সহ সমন্বয়কদের নিয়ে ফেসবুকে যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, তাদেরকে পাকিস্তানের রাজাকার বলেছে, আমরা চাই সেই দেশদ্রোহী এহসানুল আজিজ বাবুকে যেন অতিদ্রুত গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাকে শিল্পকলার সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর সাধারণ জনতার মধ্যে থেকে দুজন ব্যক্তিকে বিভিন্ন মিডিয়া লোকজন প্রশ্ন করতে থাকে। প্রশ্নের এক পর্যায়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য তাদেরকে রমনা থানা পুলিশের হাতে হস্তান্তর করে। এখন সাধারণ জনগণের দাবি যারা খুনি হাসিনা মাফিয়া সরকারের দোসর ছিল, এখনো যারা দেশ নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, প্রধান উপদেষ্টা সহ সমন্বয়কদের নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করে, এখনো যার ফেসবুক আইডিতে বিভিন্ন ধরনের আক্রমনাত্মক লিখা রয়েছে তাকে গ্রেফতার না করে সাধারণ জনগণকে গ্রেপ্তার করল কেন? আমাদের চাওয়া যে দোষী তাকে গ্রেফতার করবে কোন সাধারণ নাগরিককে নয়। সাধারণ জনগণের দাবি অতিদ্রুত নাট্যকার এহসানুল আজিজ বাবুকে গ্রেফতার করা এবং তাকে শিল্পকলা একাডেমীর মত স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করা। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে তার মত স্বৈরাচারের দোসরদের যেন জায়গা না হয় এটাই সাধারণ জনগণের দাবি।