কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি:
শিক্ষা সনদ ও এন আই ডি কার্ডের জন্ম তারিখ জালিয়াতি মামলার তথ্য গোপন টোকন চৌধুরী প্রার্থী বাতিল আনিস বিজয়ের পথে
১৪ বছর বয়সে ডিগ্রি পাস করেন কুষ্টিয়ার এক চেয়ারম্যান প্রার্থী!
দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী বুলবুল আহমেদ চৌধুরী।
নির্বাচনি হলফনামা অনুযায়ী কুষ্টিয়ার এক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে ডিগ্রি পাস করেছেন। জন্মসনদ ও শিক্ষাসনদে ভিন্ন ভিন্ন জন্ম তারিখের হিসেবে এ তথ্য উঠে আসে।
দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী বুলবুল আহমেদ চৌধুরীর হলফনামার তথ্য এনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আনিসুর রহমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর এক আবেদনে এ অভিযোগ করেছেন।
তিনি দাবি করেন, বুলবুল আহমেদ চৌধুরী জন্ম তারিখ নিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। তার হলফনামার কাগজে দুই জন্ম তারিখ উল্লেখের প্রসঙ্গ টেনে তিনি এর প্রতিকার চেয়েছেন।
প্রার্থী বুলবুল আহমেদ চৌধুরীর হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার জন্মতারিখ ১৯৮১ সালের ৩১ ডিসেম্বর। জমা দেওয়া নথিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, ১৯৯৫ সালে সামাজিক বিজ্ঞানে তৃতীয় বিভাগে ডিগ্রি পাস করেছেন। দুই কাগজের হিসাবে, বুলবুল চৌধুরী মাত্র ১৪ বছর বয়সে ডিগ্রি পাস করেছেন। সাধারণত ১৬ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায়।
মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় এ বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তার নজরে কেন আসেনি তা নিয়েও চলছে নানা জল্পনা।
বুলবুল চৌধুরীর এসএসসির পরীক্ষার নিবন্ধনপত্রে দেখা যায়, তার জন্ম তারিখ ১৯৭৫ সালের ৬ মার্চ। এসএসসি পরীক্ষার নিবন্ধনে উল্লেখিত জন্ম তারিখ ও জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লেখ করা জন্ম তারিখের মধ্যে পাঁচ বছর আট মাস পার্থক্য রয়েছে। তাছাড়া ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে মামলা ছিল বা আছে কি না সে বিষয়েও অস্পষ্টতা দেখা গেছে।
প্রার্থীর হলফনামায় এমন অসঙ্গতির বিষয়ে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু আনছার , ‘সাধারণত মনোনয়নপত্র দাখিলের বিরুদ্ধে দাবি-আপত্তি আছে কি না বা কোনো অভিযোগ আছে কি না তা দেখা হয়। আমার জানা মতে, ওই সময় কোনো অভিযোগ তোলা হয়নি। আপিলের সময়েও কেউ অভিযোগ করেননি। আর বয়সের ব্যাপারে, ভোটার তালিকার কোনো তথ্যের ব্যাপারে, কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ নেই। তবে, হলফনামার সত্য-অসত্য একটি ব্যাপার আছে, আপনি যেটা বলছেন- এসব বিষয় নিয়ে যখন প্রশ্ন করার কথা সে সময় কেউ প্রশ্ন করেননি।’
মুহাম্মদ আবু আনছার বলেন, ‘যাচাই-বাছাইকালে বিষয়টি চোখে না পড়ার একটি কারণ হতে পারে, প্রার্থীর বয়স ২৫ বছর নির্ধারিত থাকা। বাছাইয়ের সময় সাধারণত নজরে থাকে ২৫ বছরের নিচে হচ্ছে কি না সেটা। বয়সের ক্ষেত্রে প্রার্থীর উচিত ছিল এসএসসির সনদ দেখে এনআইডি করা। তাহলে এটাই সঠিক হতো।
এ ব্যাপারে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল ওয়াদুদ ইত্তেফাককে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের যে বিধিমালা আছে, সে মোতাবেক হলফনামায় এসএসসি পাসের সনদ বা নিবন্ধনের কোনো কপি দেওয়া হয় না বা বিধিমালায় নেই বলে চাওয়াও হয় না।’
একজন প্রার্থী ১৫ বছরেরও কম সময়ে ডিগ্রি পাস করেছেন, হলফনামায় উল্লেখ ও সংযুক্ত করা সেই ডিগ্রি পাসের সনদ দেখে প্রশ্ন তোলা যেত কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিক্ষাগত সনদের শেষ সনদের কথা বলা হয়েছে। হলফনামায় সেটাই সংযুক্ত করা হয়েছে। সার্টিফিকেটে উল্লেখ করা বয়স ও এনআইডিতে উল্লেখ করা বয়স যদি ভিন্ন হয় এবং কেউ অভিযোগ করে, আমরা সেটা তদন্ত করে দেখবো। তারপর বলা যাবে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে এবং নির্বাচনের আগেই তা দেখবো।’
অভিযোগের বিষয়ে প্রার্থী বুলবুল আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার সাড়া মেলেনি।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন ছিল ২১ এপ্রিল। তা যাচাই-বাছাই হয় ২৩ এপ্রিল। ২৬ এপ্রিল ছিল আপিলের তারিখ। প্রত্যাহারের তারিখ ছিল ৩০ এপ্রিল। আর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ মে। আগামী ২১ মে এ উপজেলায় অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন।
সম্পাদকঃ মোঃ আব্দুল বারী।
© ভোরের কন্ঠ - ২০২৪