Monday, December 23, 2024
Homeরাজনীতিঝিনাইদহে ঐতিহাসিক কর্মী সম্মেলনে ডা: শফিকুর রহমান।

ঝিনাইদহে ঐতিহাসিক কর্মী সম্মেলনে ডা: শফিকুর রহমান।

মাহাবুবুর রহমান:

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান ঝিনাইদহ উজির আলী হাই স্কুল ময়দান ঐতিহাসিক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি দেশ গড়তে চাই যেখান আল্লাহর বিধান অনুযায়ী সুবিচার কায়েম হবে। যেখানে মানুষের মধ্যে কোন বৈষম্য থাকবে না। যে যার ন্যায্য পাওনা তার হাতে পেয়ে যাবে।যুবকদের হাতে কাজ তুলে দেওয়া হবে। জাতি গঠনে যুবকরা ভূমিকা পালন করবে। বেকারত্বের অভিশাপে আর একটা যুবককেও আত্মহত্যা করতে হবে না। যুবককে চাকুরী পাওয়ার জন্য কোন দুষ্টু লোকের কাছে টাকা ঘুস দিতে হবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহ জেলার উজির আলী কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে ঐতিহাসিক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা আমির অধ্যাপক আলী আজম মো: আবু বকরের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুল আওয়ালের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য যশোর-কুষ্টিয়া জোনের অঞ্চল তত্ত্বাবধায়ক মোবারক হুসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মতিউর রহমান, জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক আ: আলীম, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ আ: হাই, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আবু তালিব, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এইচএম আবু মুসা, ঝিনাইদহ জেলা শিবিরের সভাপতি মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শৈলকুপা থানা আমির মতিউর রহমান, হরিণাকুন্ডু উপজেলা আমির মাস্টার বাবুল হোসেন, সদর থানা আমির মতিয়ার রহমান, কালিগঞ্জ উপজেলা আমির মাওলানা অলিউর রহমান, কোটচাঁদপুর উপজেলা আমির মাস্টার আজিজুর রহমান, মহেশপুর উপজেলা আমির অধ্যাপক ফারুক আহমেদ। জেলার লক্ষাধীক কর্মী সম্মেলনে যোগ দেন। এসময় পুরো জেলা সম্মেলনের নগরীতে পরিণত হয়। কর্মী সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শহীদ ইবনুল ইসলাম পারভেজের বাবা মাস্টার জাহাঙ্গির হোসেন। মাওলানার শফিকুল ইসলামের কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সম্মেলনের সুচনা হয়।

২০১৭ সালের একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমি ঐদিন একজন শহীদের বাসায় এসেছিলাম। কিছুক্ষণ পর আমাকে শহর ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। আমি চোর ছিলাম না, ডাকাত ছিলাম না, কোন গডফাদারও ছিলাম না। আমি একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক ছিলাম। দুই হাজার ১৭ সালের ঘটনা যদি এই হয় তাহলে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশের কি অবস্থা ছিল তা আমরা বুঝতে পারি। সোনার বাংলা বানানোর কথা বলে তারা শ্বশ্বান বাংলা বানিয়েছিল। ঘরে ঘরে লাশ আর প্রান্তরে প্রান্তরে ছোপ ছোপ রক্ত উপহার দিয়েছিল। আমি সেইদিনে শহীদি ঈদগাহর মজলূম জনগনকে সম্মান জানাতে এসেছি। মন খুলে যদি প্রত্যেক শহীদের পিতাকে চুমু দিতে পারতাম।

আজকের সম্মেলনে আছেন একজন শহীদের পিতা, শহীদ পারভেজের পিতা জনাব জাহাঙ্গির সাহেব। তিনি যখন হাতটি বাড়িয়ে দিয়েছেন আমার বুকে আমার বুকবে জড়ায়া রাখতে পারিনি। আমি যে বাসার কথা বলেছি, যে বাসায় সেদিন আমাকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, সেটি ছিল ওনারই বাসা। আলমাহদুলিল্লাহ সেই অবস্থা থেকে ১৮ কোটি মানুষকে মুক্তি দিলেন। আবেগ প্রবণ হয়ে তিনি বলেন, আমি আজ পারবো না সকল শহীদের ঘরে যেতে। সমস্ত শহীদের মাকে, বোনকে, স্ত্রীকে, বাবাকে ভাইবোনকে, তাদের সন্তানদেরকে আমি সালাম জানাতে পারবো না। সময়ের সীমাবদ্ধতা আমার পক্ষে তা সম্ভব হবে না। আজ তার প্রতীক হিসেবে ঝিনাইদহের একটি শিশু আমার প্রয়োজন ছিল।

আমি বলেছিলাম একটি শিশু আমার হাতে তুলে দিন। আমি মন ভরে তাকে চুমু দিবো। আদর করবো। সম্মান জানাবো। এসময় তিনি একটি শিশুকে কাছে টেনে নেন। কোলে তুলে নিয়ে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দেন। এসময় পুরো ময়দানজুড়ে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মাঠ থেকে লাখো কণ্ঠে ভেসে আসে নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার ধ্বনি। ডা: শফিকুর রহমান বলেন মনে আমাদের অনেক কষ্ট। আমাদের ওপর জুলুমের তান্ডব চালানো হয়েছে।

এক এক করে আমাদের শীষ ১১ জন নেতাকে আমাদের বুক থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বানানো সাক্ষি আর ক্যাঙ্গারো কোর্ট বসিয়ে আমাদের লোকজনকে হত্যা করা হয়েছে। মহান রবের দরবারে আমরা মামলা দায়ের করেছি। জানি না এই জীবনে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারবো কি-না।

আমরা আমাদের কার্যালয়ে পর্যন্ত যেতে পারিনি। আমরা ৫ জন মানুষ একসাথে বসতে পারছিলাম না। বাপ-বেটা একসাথে বসে ভাত খাচ্ছিল, দুপুর বেলা তাদের তুলে নিয়ে বলে তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

তিনি সাতক্ষীরা জেলার উদাহরণ টেনে বলেন, আপনাদের পাশেই সাতক্ষীরা জেলা। বুলডুজার চালিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর মাটির সাখে মিশিয়ে দিয়েছে। অন্যায়ভাবে আমাদের নিবন্ধন এবং প্রতীক কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের ১লা আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দিশেহারা সরকার আমাদেরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আল্লার কি কাজ ৪ দিনের মাথায় আল্লাহতায়াল তাদেরকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু আমরা জাতিকে দেশকে ভালবাসি। আমরা আইন হাতে তুলে নিয়ে কোন প্রতিশোধ নিতে চাই না। আমরা যা চাইবো আইনকে মান্য করে আইন আদালতের মাধ্যমে চাইবো। আমরা আইন আদালতের কাছে কোন পক্ষপাতিত্ব চাই না। আমরা চাই শুধু ন্যায় বিচার। আমরা কোথাও শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো কাজ করবো না। কেউ বলতে পারবে না ৫ তারিখের পর কোন কর্মী চাঁদাবাজি করেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল তারা ক্ষমতাচ্যুত হলে ৫ লাখ নেতাকর্মী মারা যাবে। তিনি প্রশ্ন রাখেন আওয়ামী লীগ চলে গেছে ক্ষমতা থেকে ৫ লাখ মানুষকে কি হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ প্রতিশোধ পরায়ণ নয়।

এজন্য তারা চেয়েছে বাংলাদেশে যেন একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তারা একটার পর একটা ষড়যন্ত্র করেছে। আল্লাহ তাদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছে।এসময় তিনি জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, আমাদের বার্তা স্পষ্ট। আমরা চাই ন্যায় বিচার। আমরা এমন এক সমাজ চাই যে সমাজে কোন বৈষম্য থাকবে না। আমরা একটা যুবকের হাতও বেকার থাকতে দিবো না। প্রত্যেকের হাতে আমরা কাজ তুলে দেবো। একেকজন যুবক হবে উন্নয়নের নায়ক।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এমন একটা দেশ চায়, যেখানে আল্লাহ তায়ালার বিধান অনুযায়ী সামাজিক সুবিচার কায়েম হবে। যেখানে মানুষের মধ্যে কোন বৈষম্য থাকবে না। যে যার ন্যায্য পাওনা তার হাতে পেয়ে যাবে। যুবকদের হাতে কাজ তুলে দেওয়া হবে। জাতি গঠনে যুবকরা ভূমিকা পালন করবে। বেকারত্বের অভিশাপে আর একটা যুবককেও আত্মহত্যা করতে হবে না। যুবককে চাকুরী পাওয়ার জন্য কোন দুষ্টু লোকের কাছে টাকা ঘুস দিতে হবে না। আমাদেরকে যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেন আমার মায়েরা থাকবেন মায়ের মর্যাদায়, বোনেরা বোনের মর্যাদায়, ওরসজাত মেয়ের মর্যাদায়। তাদের ইজ্জতের ওপর হাত দেওয়ার সাহস কোন দুষ্ঠু কিংবা লম্পটের হবে না।

সকল ধর্মের মানুষ তাদের ধর্মের কার্যকলাপ ইজ্জত সম্মান এবং নিরাপত্তার সাথে করতে পারবে। এইভাবে আমরা বৈষম্যহীন একটা সমাজ গড়তে চাই। আজকে দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী। কারা দ্রব্যের দাম বাড়ায়। সবাই জানে। সরকারের কাছে আমাদের স্পষ্ট বার্তা সিন্ডিকেট তছনছ করে দেন। জনগণকে শান্তি দেওয়ার জন্য যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করুন। জগগণের কাঙ্খিত সংস্কার করুন। জনগনের ৩৬ কোটি হাত আপনাদের সাহায্য করবে ইন শা আল্লাহ।

তিনি আহ্বান জানান অতীতের শাসকরা যা করেছে আমরা যেন তা না করি। তিনি আবারো গর্ব করার পতনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলে যারা গর্ব করে বলতো এই দেশ আমার বাপ-দাদার আমরা পালাবো না। তারা জাতির কাছে দেওয়া ওয়াদা রক্ষা করতে পারেনি। কারণ তারা আল্লাহকে ভয় করতেন না। তাদের অন্যায় বিচারের আশ্বাস দিয়ে বলেন আমরা তাদের বিচার চাই। যে যেখানে থাকুক। ন্যায় বিচারের মাধ্যমে তাদের বিচার করা হবে।

এই সময়ে সবচেয়ে বেশি জুলুম করা হয়েছে আলেম ওলামাদের ওপর। তাদের ডাবেড়ি পড়িয়ে আদালতে হাজির করা হয়েছে। একজেল থেকে আরেক জেলে নেওয়া হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগে। তাদের চোখের পানি আর রক্ত বৃথা যায়নি। তিনি উপস্থিত কর্মীদের কাছে দোয়া চান এবং বলেন, আপনারা দোয়া করবেন আমরা যেন জাতির জন্য ভাল কিছু করতে পারি।

যুবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, সবার ঘরে ঘরে আপনার কল্যানের বার্তা পৌঁছে দিন। মোবারক হুসাইন বলেন, ১৫ বছর জালিম সরকারের নির্যাতনে জামায়াতের হাজার হাজার নেতাকর্মী পঙ্গু হয়েছে।

৫ আগস্ট তাদের বিদায়ে আমাদের সুন্দর পরিবেশ ফিরে এসেছে। তিনি বলেন জামায়াতে ইসলামী ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ঝিনাইদহকে ইসলামের জন্য একটি উর্বর জায়গা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই জায়গাকে একটি ইনসাফপূর্ন সমাজ কায়েমের জায়গা হিসেবে দেখতে চাই। তিনি প্রাপ্ত সুযোগকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন আসুন আমরা সুযোগকে কাজে লাগাই। ইসলামের দাওয়াত নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌছি। সমাজ কল্যানমূলক কাজ করি। মানুষের মধ্যে একটা আশা জাগাই। মানুষ যেন আমাদের পেছনে এসে দাড়াতে পারে।

RELATED ARTICLES

Most Popular