কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি।
কুষ্টিয়ায় পুলিশের উপর এমপির ভাতিজাদের হামলা, কারাগারে ৪
পুলিশের উপর হামলার আসামি এমপির দুই ভাতিজা তুষন চৌধুরী ও আরজু চৌধুরী।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আটক এক মাদক কারবারিকে ছিনিয়ে নিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) ভাতিজারা পুলিশ সদস্যদের আটকে রেখে মারধর করেছে। এ কথা জানিয়ে পুলিশ বলছে, এই হামলায় জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ৩ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
রবিবার (৯ জুন) দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার হোগলবাড়ীয়া ইউনিয়নের চরদিয়াড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সোমবার (১০ জুন) ভোররাতে পুলিশ ওই চারজনকে আটকের পর রাতে এ হামলার ব্যাপারে দৌলতপুর থানায় পৃথক দুইটি মামলা করেছে। একটি মামলায় কুষ্টিয়া-১ আসনের এমপির দুই ভাতিজাসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ডিবির উপর হামলায় নেতৃত্ব দেয় কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল হক চৌধুরীর দুই ভাতিজা। এই দুই অভিযুক্তের আরেকজন চাচা দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান।
পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি গোপন রাখার কারণে গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য পেতে দেরি হয়।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, রবিবার গভীর রাতে চড়দিয়াড় এলাকায় জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার একটি দল মাদকবিরোধী অভিযান চালায়। এসময় ১০০ বোতল ফেনসিডিলসহ জুয়েল রানা নামে এক মাদক কারবারিকে আটক করে তারা। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উদ্ধার করা মাদক ও আসামিকে ছিনিয়ে নিতে কারবারিরা পুলিশের উপর হামলা চালায়।
পুলিশ সূত্র জানায়, হামলাকারীরা ৩ পুলিশ সদস্যকে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করে।
পুলিশের উপর হামলার খবর পেয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও দৌলতপুর থানা পুলিশ সোমবার ভোররাতে ঘটনাস্থল থেকে আহত অবস্থায় ডিবির এসআই জাহিদুজ্জামান জাহিদ, কনস্টেবল জাহাঙ্গীর হোসেন ও কামরুল ইসলামকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
পরে সোমবার (১০ জুন) রাতে কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরীর দুই ভাতিজা উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সোনাকুন্ডি গ্রামের মৃত রবিউল চৌধুরীর ছেলে তুষন চৌধুরী (৩২) ও মিন্টু চৌধুরীর ছেলে আরজু চৌধুরীসহ (২৫) ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে দৌলতপুর থানায় মামলা করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এসআই আলহাজ আলী। মাদক উদ্ধার ও আটকের ঘটনায় আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পৃথক মামলায় উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সোনাইকুন্ডি আশ্রয়ন এলাকার আব্দুল লতিফ দফাদারের ছেলে জুয়েল রানা (২১), পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় একই ইউনিয়ন চড়দিয়াড় এলাকার ছামিউল লস্করের ছেলে রনি ইসলাম (২২) ও মো. মান্না লস্কর (২০) এবং মৃত আমিরুল ইসলামের ছেলে শাহরিয়ার মাহমুদ রাজিবকে (৪০) গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, হামলা ও মাদক উদ্ধারের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। দুই মামলায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ।
এ বিষয়ে জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, দৌলতপুর থানায় দুটি পৃথক মামলা করা হয়েছে। মামলার ৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, “আমাদের ৩ জন পুলিশ সদস্য আহত অবস্থায় এখনও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।”
এদিকে, স্থানীয় এমপি ও নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানের দুই ভাতিজা পুলিশের ওপর হামলা মামলার আসামি হওয়ার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি খবরটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
এমপির এই দুই ভাতিজার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে এমপি রেজাউল হক চৌধুরী ও দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান বুলবুল আহমেদ টোকেন চৌধুরীর বক্তব্য নেওয়ার জন্য বারবার তাদের মোবাইল ফোন নম্বরে কল করা হলেও তারা তা ধরেননি।