নিজস্ব প্রতিবেদক :
আসন্ন ঈদে নাড়ীর টানে বাড়ী ফেরা মানুষদের ঢল, বৃস্টিতে ভোগান্তি। প্রিয়জনদের সঙ্গে কোরবানির ঈদ উদ্যাপনে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছেন নগরবাসী। ঈদের আগমুহূর্তের ভিড় আর দুর্ভোগ এড়াতে বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবসে ঢাকা ছাড়ছেন অসংখ্য মানুষ। তবে শেষ বিকেলের বৃষ্টি কিছুটা ভাটা পড়েছে ঈদযাত্রায়।
বছর ঘুরে আবার দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। আগামী ১৭ জুন (সোমবার) উদ্যাপিত হবে ঈদুল আজহা। আগামী সপ্তাহের রবি, সোম ও মঙ্গলবার ঈদ উপলক্ষে সরকারি ছুটি। তার আগে এই সপ্তাহের বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবস এবং শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ঈদ সামনে রেখে তাই রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নদীপথে ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ। আর চাঁদপুর, বরিশাল ও ভোলা যাওয়া জন্য ঘাটে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি বিলাসবহুল লঞ্চ। লঞ্চগুলোর কেবিন খালি নেই, ডেকেও দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়। এবারের ঈদযাত্রা সম্পর্কে শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরাম (এসসিআরএফ) জানিয়েছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা অঞ্চলের সোয়া দুই লাখ মানুষ বৃহত্তর বরিশালসহ বিভিন্ন উপকূলীয় জেলায় যাবেন। কিন্তু এবার ঈদযাত্রার সময় মাত্র চারদিন হওয়ায় নৌযান চলাচলে চাপ বেশি পড়বে। নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার ৯৫ শতাংশ নৌ-যাত্রী ঢাকা নদীবন্দর (সদরঘাট নদীবন্দর) ব্যবহার করবে।
ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের আওতায় সদরঘাট টার্মিনাল থেকে মোট ১৮০টি লঞ্চ চলাচল করবে। এসব নৌপরিবহনের মধ্যে ঢাকা ছাড়বে ৯০টি, বিভিন্ন স্থান থেকে ৯০টি ঢাকায় আসবে।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি লঞ্চই যাত্রী বোঝাই। ডেকে জায়গা পেতে দুপুর থেকেই ভিড় করছেন যাত্রীরা। তবুও যাত্রী ওঠানোর হাঁকডাক দিচ্ছেন লঞ্চ শ্রমিকরা। তারা জানান, পদ্মা সেতুর কারণে নৌ পথে যাত্রীর চাপ আগের থেকে অনেক কমেছে। তবে এরপরও অনেক যাত্রী দুপুর থেকে ভিড় করছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন রুটে বেশ কয়েকটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। রাত ৯টা পর্যন্ত বাকি লঞ্চগুলো ছেড়ে যাবে।
আজকের পর থেকে অফিস-আদালত ছুটি হয়ে যাওয়ায় ভিড় বাড়তে শুরু করেছে জানিয়ে লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা বলেন, ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস আজ। তাই ভিড় বেড়েছে। আগামীকাল সকাল থেকেও অনেক লঞ্চ গন্তব্যের উদ্দেশে ছুটে যাবে। এতে রোববার শেষ দিনে চাপ কিছুটা কমতে পারে। ফারহান -৮ লঞ্চের কর্মচারী আরিফ জানান, আজকে মাত্র অফিস-আদালত শেষ হলো। বৃষ্টিতে এখন যাত্রীর চাপ কিছুটা কম। তবে সন্ধ্যার পর থেকে চাপ বাড়বে।
চাঁদপুরগামী লঞ্চ শিডিউল অনুযায়ীই চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর রুটে চলাকারী লঞ্চের কর্মচারীরা। তারা জানান, পদ্মা সেতুর প্রভাব না থাকায় চাঁদপুর রুটে ভিড় আগের মতোই আছে। স্বাভাবিক সময়ে ভিড় যেমন থাকে, তার চেয়ে সামান্য বেড়েছে। ঈদের ভাড়া প্রসঙ্গে লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা জানান, ডেকের ভাড়া আগের মতোই আছে। তবে কোনো কোনো লঞ্চের কেবিনে হয়তো কেবিনবয়রা বাড়তি ভাড়া নেয়ার চেষ্টা করছে। সেটিও নজর রাখা হচ্ছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সদরঘাটের টিকিট কাউন্টার থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, লঞ্চগুলোতে ডেকের যাত্রী সংখ্যাই বেশি। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরাই বেশি যাচ্ছেন লঞ্চে। সড়ক পথের চেয়ে তুলনামূলক ভাড়া কম ও যাত্রাপথ আরামদায়ক হওয়াতেই নৌপথে যাত্রীর চাপ বাড়ছে।
এদিকে যাত্রীরা বলছেন, বাসের চেয়ে নৌপথে যাত্রাই বেশি আরামদায়ক। বাসে ভাড়াও বেশি আবার অনেক সময় যানজটেও পড়তে হয়। পটুয়াখালীগামী সুন্দরবন-১৪ লঞ্চের যাত্রী মাঈনুল হাসান বলেন, পদ্মাসেতু হওয়ার কারণে ঈদযাত্রা অনেক সহজ হয়েছে। তবে কোরবানির ঈদে পশু পরিবহনের ট্রাকের চাপ থাকায় অনেক সময়ই যানযট তৈরি হয় মহাসড়কে। তবে নৌপথে এই ঝামেলা নেই। পরিবারের সবাইকে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি যাচ্ছি।
তবে যাত্রীদের চাপ বাড়ায় লঞ্চ কেবিনগুলোর ভাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শাহীন নামে এক যাত্রী। তিনি বলেন, অগ্রিম টিকিট কাটিনি। এখন কয়েকটি লঞ্চেন কেবিনবয়দের সঙ্গে কথা বললে, তারা বাড়তি ভাড়া চাচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে ডেকে বসেই যেতে হচ্ছে।
শেষ বিকেলের বৃষ্টিতে যাত্রাপথে ভোগান্তি বেড়েছে জানিয়ে কালাইয়াগামী যাত্রী মাহিম বলেন, লঞ্চ ঘাটের কাছাকাছি আসার পরই বৃষ্টি নেমেছে। তাড়াহুড়ো করে লঞ্চে উঠতে গিয়ে ভিজে গেছি। ব্যাগসহ মালপত্রও ভিজে গেছে। আরেক যাত্রী মো. খোকন, ঈদে বাড়ি যাওয়ার জন্য সবাই আশা করে থাকে। এতোদিন বৃষ্টি নেই। বাড়ি যাওয়ার সময়ই বৃষ্টি। ঈদযাত্রার আনন্দই মাটি হয়ে গেল। তারওপর বাড়তি ভাড়াও নেয়া হচ্ছে। বাড়তি ভাড়া নেয়ার কথা অস্বীকার করে তাসরিফ-৩ লঞ্চের কর্মচারী সোলেমান জানান, স্বাভাবিক ভাড়াই নেয়া হচ্ছে। কোনো বাড়তি টাকা চাওয়া হচ্ছে না।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, বৃষ্টিতে যাত্রী চাপ কিছুটা কমেছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে যাত্রী ও চালকদের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিবেচনা করে চলাচলের জন্য সতর্ক করা হচ্ছে। বৃষ্টির পরিমাণ কমলে লঞ্চ ছাড়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে উপকূলীয় জেলাগুলোতে ভ্রমণকারীরা যাতে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন সেজন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিআইডব্লিউটিসির বিশেষ স্টিমার সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এসব স্টিমার সার্ভিস ঢাকা নদীবন্দর থেকে ১৩, ১৬ ও ২০ জুন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে এবং ১৪, ১৮ ও ২২ জুন মোরেলগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসবে।
ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তায় নৌপুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কাজ করছেন।
সদরঘাট নৌ-পুলিশ সূত্র জানায়, পরিস্থিতি স্বভাবিক রয়েছে এখন পর্যন্ত। যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিটি লঞ্চ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। কোনো লঞ্চই অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে যেতে দেয়া হবে না।