নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাত দিন কারাভোগের পর জামিনে এসেও পুলিশ আতঙ্কে ভুগছে ভুক্তভোগী শিশুটি। ভয়ে তার সহপাঠী এবং অন্য শিশুরাও এখন স্কুলে যেতে চাচ্ছে না। ঘটনাটি উপজেলা সদরের টেকানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৪ জুলাই নাসিরনগর থানায় ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে এক শিশুর বাবা এই মামলা করেন। যদিও তিনি দাবি করেছেন, ‘আমাকে ডাইকা নিয়া থানার এসআই এনামুল হক কয় তুমি মামলার বাদী হইবা। পরে আমারে বসাইয়া রাইখা মামলা লেইখা এরা আমার সই নিছে।’
মামলার আসামি ভুক্তভোগী শিশুটি বলে, ‘আমি সকাল ৭টার সময় আমার সহপাঠীর সঙ্গে প্রাইভেট পড়তে নাসিরনগর যাই। সকালের প্রাইভেট শেষে স্কুলে যাই ১০টার সময়। তখন আমাদের পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা শেষে বিকেল ৪টার দিকে অন্য আরেকটা প্রাইভেটে যাই। সেখান থেকে আমার বাবা আমাকে থানায় নিয়ে আসে। আমি কিছুই জানি না, অথচ থানায় নেওয়ার পর পুলিশ আমাকে জেলে দিয়ে দিল।’ শিশুটি আরও বলে, ‘আমি অসুস্থ, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। জেলে থাকতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি। এখন আর স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে না। পুলিশ দেখলে ভয় লাগে আবার যদি ধরে নিয়ে যায়।’
মামলার সাক্ষী ও টেকানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রওশন আরা বলেন, ‘ঘটনার দিন ছিল বন্ধের পর স্কুল খোলার প্রথম দিন। সকাল ৯টার সময় স্কুলে ঢুকে পাঁচজন মেয়ে বাচ্চাকে শ্রেণিকক্ষের ভেতরে দেখতে পান সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তার। তাদের কয়েকজনের পরনে পোশাক ছিল না। কিন্তু কোনো ছেলেকে আমরা আশপাশে দেখিনি।’ তিনি বলেন, যে শিশুটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে আমার সাবেক ছাত্র। সে অনেক ভালো ছেলে।’
মামলার আরেক সাক্ষী সালমা আক্তার বলেন, ‘আমিই প্রথম বাচ্চাগুলোকে দেখতে পেয়ে ম্যাডামকে (প্রধান শিক্ষক) জানাই। আমরা ওই শিশুকে তো দূরের কথা, কোনো ছেলেকেই দেখিনি।’
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৪ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টার সময় জাম্বুরার প্রলোভন দেখিয়ে শিশুদের স্কুলে নিয়ে যায় ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্র। অথচ প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সেদিন প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে ৪৫ মিনিটের দূরত্বে সকাল ৭টার সময় সহপাঠীর সঙ্গে সে নাসিরনগরের উদ্দেশে যাত্রা করে।
এ বিষয়ে শিশুটির শিক্ষক ও নাসিরনগর আশুতোষ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রওশন সিদ্দিক বলেন, ‘সে আমার ছাত্র। গত ৪ জুলাই সকাল ৮টায় আমার কাছে গণিত প্রাইভেট পড়তে আসে। তার বাড়ি থেকে আমার এখানে আসতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগে।’
পাঁচ শিশুর একজনের মা বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি দেখেছি আমাদের পাঁচ বাচ্চা কাপড় ছাড়া নদীতে নেমে গোসল করতেছে। কতক্ষণ পরে দেখছি স্কুলের সিঁড়ি দিয়া উপরে গেছে। আমি আমার বাচ্চারে ডাক দিছি নিচে নামার জন্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়ের বয়স পাঁচ বছর। সে এখনো বিছানায় প্রস্রাব করে, কাপড় ছাড়া নদীতে গোসল করে। ওই পোলারে (অভিযুক্ত শিশু) আমরা চিনি, হে ইতা করার পোলা না, বয়সও হয় নাই।’
বাদীকে থানায় ডেকে এনে মামলা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহাগ রানা। তিনি বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই শিশুকে আটক করা হয়েছিল। মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। পুলিশ আতঙ্কের বিষয়টি সত্য।