Monday, December 23, 2024
Homeদেশউকিল মুন্সী বাউল সাধক, গীতিকার, সুরকার ১২ ডিসেম্বর ১৯৭৮- ১১ জুন ১৮৮৫

উকিল মুন্সী বাউল সাধক, গীতিকার, সুরকার ১২ ডিসেম্বর ১৯৭৮- ১১ জুন ১৮৮৫

এম ডি মুরাদ চৌধুরী :

উকিল মুন্সী বাংলাদেশের একজন বাউল সাধক, যিনি সুয়া চান পাখি, আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানি রে, আমার কাংখের কলসী গিয়াছে ভাসি, সহ অসংখ্য কালজয়ী গান রচনা করে গেছেন। তাঁর গুরু ছিলেন আরেক বাউল সাধক রশিদ উদ্দিন।

নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুড়ির নূরপুর বোয়ালীগ্রামে ১৮৮৫ সালের ১১ জুন একটি ধনাঢ্য মুসলিম পরিবারে উকিল মুন্সী জন্মগ্রহণ করেন। তার পারিবারিক নাম আব্দুল হক আকন্দ। শৈশবে তিনি ঘেটুগানে যোগ দেন। পরে গজল ও পরিণত বয়স থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বাউল সাধনায় লিপ্ত থাকেন। তাঁর গজল গানের সূত্রপাত হয় তরুণ বয়সে।

তাঁর চাচা কাজী আলিম উদ্দিনের বাড়ি মোহনগঞ্জ থানার জালালপুর গ্রামে বেড়াতে যান। সেখানে ধনু নদী পারের এক গ্রামের লবু হোসেনের মেয়ে হামিদা খাতুনের (লাবুশের মা) প্রেমে পড়ে যান তিনি। এই প্রেম নিয়ে তিনি লিখেন “উকিলের মনচোর” নামক একটি গান। তাঁর চাচা এই প্রেমের কথা জানার পর হামিদার বাবা সাধারণ কৃষক হওয়ায় তাকে পরিবার থেকে বাঁধা দেন। তিনি বাড়ি ছেড়ে শ্যামপুর, গাগলাজোড়, জৈনপুরে ঘুরে বেড়ান।

১৯১৫ সালে জালালপুর গ্রাম থেকে কয়েক মাইল দূরে মোহনগঞ্জের বরান্তর গ্রামের এক মসজিদে ইমামতি ও আরবি পড়ানোর কাজে নিযুক্ত হন। এই সময়ে ইমামতির পাশাপাশি গজল লিখতেন এবং রাত জেগে তা গাইতেন। এতে বিরক্ত হয়ে এক ব্যক্তি পুলিশের কাছে নালিশ করে। পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যেতে আসলে উকিল পুলিশ নিয়ে গান ধরেন। সে গানে পুলিশ তার নিজের ভিতরে লুকোনো কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় এবং পরে কয়েকটি পালাগানের মঞ্চে উকিলের গান শুনে পুলিশ উকিলের মুরিদ হয় যায়। ১৯১৬ সালে হামিদা খাতুনের আগ্রহে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের এক পুত্র, সাত্তার মুন্সী।

উকিল মুন্সীর অনেক জনপ্রিয় গান আজও উচ্চারিত হয় সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গানঃ

‘নবীজির খাশ মহলে’
‘হায়রে লুকাইয়া কয়দিন রই’
‘বন্ধু বিফলে গেল নব যৌবন’
‘সোনা বন্ধুয়া রে এতো দুঃখ দিলে তুই আমারে’, ‘এসো হে কাঙালের বন্ধু’, ‘বিদেশী বন্ধুরে রূপ দেখাইয়া’, ‘ভেবেছিলাম রঙে দিন যাবেরে সুজন নাইয়া’, ‘ও কঠিন বন্ধুরে……’, ‘আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানি রে’, ‘বন্ধু আমার দিনদুনিয়ার ধন-রে’, ‘সখী গো…’, ‘আর কি অলি আমার বসিবে ফুলে’
‘আমার শ্যাম শোক পাখি গো’
‘প্রাণ সখিগো……..’
‘সে যে আড়ালে থাকে, উঁকি দিয়া দেখে’
‘পিরিত ও মধুর পিরিত’
‘আমার কাংখের কলসী গিয়াছে ভাসি’
‘রজনী প্রভাত হল ডাকে কোকিলা’
‘কাহার নামে বসবেন খোদা’
‘দীন দুনিয়ার বাদশা তুমি, উম্মতের জামিন’
সুয়া চান পাখি, ইত্যাদি।

তাঁর অনেক গান বাংলা চলচ্চিত্রে সংযোজন হয়েছে। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে কথাসাহিত্যিক ও চিত্রনির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত শ্রাবণ মেঘের দিন চলচ্চিত্রে বারী সিদ্দীকীর কণ্ঠে ব্যবহার করেন উকিলের গান। বিংশ শতাব্দীর গ্রামীণ বাংলার জীবনকে নিয়ে রচিত হুমায়ুন আহমেদের বহুকেন্দ্রিকা উপন্যাস মধ্যাহ্ন-এর অন্যতম চরিত্র উকিল মুন্সী।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের জৈনপুর গ্রামে উকিল মুন্সীর স্মরণে তার জীবন ও গান নিয়ে আলোচনা, প্রবন্ধ পাঠ, তার রচিত জনপ্রিয় গানের সঙ্গীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করে “উকিল মুন্সী স্মৃতি সংসদ”।

১৯৭৮ সালের মাঝামাঝিতে উকিল মুন্সীর স্ত্রী হামিদা খাতুন এবং এর কয়েক মাস পর ছেলে সাত্তার মুন্সী মৃত্যুবরণ করেন। সে বছরই তিনি অসুস্থ হয়ে ১২ ডিসেম্বরে মৃত্যুবরণ করেন।

আজ তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি (এম ডি আরিফুল ইসলাম মুরাদ)।

RELATED ARTICLES

Most Popular