মাহাবুবুর রহমান, কালীগঞ্জ ঝিনাইদহ থেকেঃ
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে শীতকে স্বাগত জানিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলায় কুমড়োবড়ি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন গ্রাম গঞ্জে নারীরা। শীত জেঁকে বসায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কুমড়োবড়ি তৈরির ধুম পড়েছে। শীত মানে বাড়তি অনেক কাজ। শীত মৌসুমে দিবা রাত্রে বাড়তি কাপড় ওঠে গায়ে। আর গ্রামিণ মহিলারা শীত কালিন খাবার তৈরী নকসি কাথা তৈরী সহ খাবার তালিকার অন্য রকম স্বাদের কুমড়োর বড়া তৈরীতে মহা ব্যস্ত থাকেন। আর এই কুমড়োবড়ি তৈরির উপযুক্ত সময় এই শীতকাল। শীতের সময় গ্রামীণ নারীদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়। তার ওপর দিন ছোট কাজও বেশি। এরমধ্যেই সকল কাজের আগে সকালবেলা কুমড়ো বড়া তৈরি করছেন নারীরা। কুমড়োবড়ি তরকারির একটি মুখরোচক উপাদান। এতে তরকারির স্বাদে যোগ হয় নতুন মাত্রা।
জানা গেছে, উপজেলার শত শত নারী কুমড়োবড়ি তৈরির কাজে জড়িত রয়েছেন। শীতের আগমনের সাথে সাথে কুমড়োবড়ি তৈরির ব্যস্ততা বেড়েছে গ্রামাঞ্চলের নারীদের মাঝে। বর্ষাকাল বাদে বাকি মাসগুলোতে কম-বেশি কুমড়োবড়ি তৈরি করা হয়। আশ্বিন মাস থেকে ফাল্গুন এই ৬ মাস কুমড়োবড়ি তৈরির ধুম পড়ে যায়। শীতকাল কুমড়োবড়ি তৈরির ভরা মৌসুম। এ সময় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে কম-বেশি কুমড়োবড়ি তৈরি করা হয়। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে এবং নারীরা বিভিন্ন বিভিন্ন স্থানে ও দোকানপাটে বেচ্ছেন। শীতের সময় কুমড়োবড়ির চাহিদা থাকে বেশি আর গ্রামাঞ্চলের নারীরা বাড়তি আয়ের জন্য কুমড়োবড়ি তৈরি করছেন। কুমড়োবড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ মাসকলাইয়ের ডাল আর চালকুমড়া। এর সাথে সামন্য মসলা। বাজারে প্রতি কেজি মাসকলাই ১৭০ থেকে ২০০ টাকা আর চাল কুমড়া ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সাইজ হিসেবে চালকুমড়া ১০০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ক্রয় করা যায়। ৫ কেজি চালকুমড়ার সাথে ২ কেজি মাসকলাইয়ের মিশ্রণে কুমড়া বড়া ভালো হয়। প্রথমে মাসকলাই রোদে শুকিয়ে জাঁতায় ভেঙে পরিষ্কার করে বা না ভেঙে পানিতে ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে নিতে হয়। ৫-৬ ঘণ্টা মাসকলাই পানিতে ভেজাতে হয়। তারপর ঢেঁকি বা শিলপাটায় বেটে নিয়ে কুমড়োবড়ির মিশ্রণ তৈরি করা হয়। তবে এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কুমড়া বড়ি তৈরির মেশিন স্থাপনের পর থেকে সবাই মেশিনে মাড়াই করে মাসকলাই ও কুমড়ার মিহি করা হচ্ছে। এরপর দুটির মিশ্রণে কুমড়োবড়ির উপকরণ তৈরি করা হয়। মাঠ, বাড়ির আঙিনা, ছাদ বা খোলা জায়গায় ভোর থেকে বড়ি বসানো শুরু করা হয়। পাতলা কাপড়ে সারি সারি বড়ি বসানো হয়। কুমড়োবড়ি বসানোর পর দুই-তিন দিন একটানা রোদে শুকানো হয়। সূর্যের আলো কম হলে ৩-৪ দিন পর্যন্ত শুকাতে সময় লেগে যায়। শুকানোর পর কাপড় থেকে বড়ি উঠিয়ে পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়। উপজেলার এিলোচনপুর ইউনিয়নের নাজমা বেগম ও সাথী খাতুন জানান, ৫ কেজি কুমড়ার সাথে দুই কেজি মাসকলাইয়ের মিশ্রণে কুমড়া বড়ি ভালো তৈরি হয়। আগে মাসকলাই পানিতে ভিজিয়ে পরিষ্কার করা আর ঢেঁকিতে বা পাটায় বেটে বড়ি তৈরি করতে প্রচুর পরিশ্রম হতো। সেই সাথে অনেক সময় লাগত। এখন খোসা ছাড়ানো মাসকলাই বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। মাসকলাই পানিতে ভিজিয়ে মেশিনের সাহায্যে মাড়াই করে অল্প সময়ে বড়ি তৈরির মিশ্রণ তৈরি করা খুব সহজ হয়েছে।
এতে করে অল্প সময় প্রচুর পরিমাণ কুমড়া বড়ি তৈরী সম্বব হচ্ছে।এক কেজি কুমড়া বড়ি তৈরী করতে প্রায় ১২০ টাকা মত খরচ হয়।আর বাজারে ২শ থেকে আড়াই শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে কুমড়া বড়া। এতে পরিবারেব চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয় করা সম্ভব হচ্ছে।উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ বাড়ির চালে ও মাচায় শোভা পাচ্ছে বড় বড় চাল কুমড়া, যা দিয়ে তৈরী হচ্ছে কুমড়োর বড়ি। শীতের ভোরে শহর কিংবা পাড়া মহল্লায় গৃহিণীরা খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন বড়ি তৈরির কাজে।
পাড়া মহল্লার গৃহিনীরা বাড়ির ছাদে বাড়ীর পাশে রৌদ্রউজ্জল জায়গায় সকলে একত্রে দল বেঁধে আবার মাটিতে মাদুর পেতে বড়ি তৈরীর কাজ করছেন।সচেতন মহল বলেছেন,গ্রামীণ নারীরা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তারা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন ও গ্রামীন অর্থনীতিতে গুরুত্বপৃর্ন অবদান রাখতে সক্ষম হবে।