Tuesday, December 24, 2024
Homeদেশঐতিহ্যবিলুপ্তির পথে গ্রামীণ ঐতিহ্য ঢেঁকি

বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ ঐতিহ্য ঢেঁকি

মো: রবিউল ইসলাম, ক্রাইম রিপোর্টার:

ধান ভানি যে, ঢেঁকিতে পার দিয়া। ঢেঁকি নাচে আমি নাচি, হেলিয়া দুলিয়া। ধান ভানি রে।’ গ্রামবাংলার তরুণী-নববধু, কৃষাণীদের কন্ঠে এ রকম গান এখন আর শোনা যায় না। বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র আবিষ্কারের সাথে সাথে সেসব পুরোনো ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। কালের বিবর্তনে ঢেঁকি এখন শুধু ঐতিহ্যের স্মৃতি বহন করে। দিন দিন ঢেঁকি শিল্প বিলুপ্ত হলেও একে সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ নেই। আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আগের মতো আর চোখে পড়ে না। একসময় ঢেঁকি ছিল গ্রামীণ জনপদে চাল ও চালের গুঁৎড়া বা আটা তৈরির একমাত্র মাধ্যম। অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে কৃষক ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে কৃষাণীদের ঘরে ধান থেকে নতুন চাল ও চালের গুঁড়া করার ধুম পড়ে যেত। সে চাল দিয়ে পিঠা-পুলি, ফিরনি, পায়েস তৈরি করা হতো। এছাড়াও নবান্ন উৎসব, বিয়ে, ঈদ ও পূজায় ঢেঁকিতে ধান ভেনে আটা তৈরি করা হতো। তখন বধুরা ঢেঁকিতে কাজ করতো রাত থেকে ভোর পর্যন্ত। ঢেঁকিছাঁটা আউশ চালের পাস্তা ভাত খেতে খুব স্বাদ হতো। একসময় মানুষ ঢেঁকিতে ধান ও চাল ভেনে চিড়া-আটা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। ঢেঁকির ধুপধাপ শব্দে মুখরিত ছিল বাংলার জনপদ। কিন্তু এখন ঢেঁকির সেই শব্দ শোনা যায় না। তখন কবি-সাহিত্যিকগণ ঢেঁকি নিয়ে কবিতা ও গান লিখেছেন। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কোথাও ঢেঁকির শব্দ নেই। ফলে বিলুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জনপদের ঐতিহ্যবাহী কাঠের তৈরি ঢেঁকি। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যেখানে বিদ্যুৎ নেই, সেখানেও ঢেঁকির ব্যবহার কমেছে। গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে কেউ কেউ বাড়িতে ঢেঁকি রাখলেও ব্যবহার করছে না। যন্ত্র আবিষ্কারের আগে ঢেঁকি শিল্পের বেশ কদর ছিল। তেল বা বিদ্যুৎ চালিত মেশিন দিয়ে ধান ও চাল ভানার কারণে ঢেঁকি আজ কদরহীন। বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে ঘুরেও এখন ঢেঁকির দেখা মেলে না। ঢেঁকি সম্পর্কে জানতে চাইলে অনেকেই জনান, আগে প্রায় সবার বাড়িতে ঢেঁকি ছিল। সেই ঢেঁকি ছাঁটা চাল ও চালের পিঠার গন্ধ আর নেই। পিঠার স্বাদ ও গন্ধ এখনো মনে পড়ে। আধুনিক প্রযুক্তির ফলে গ্রামবাংলায় ঢেঁকির ব্যবহার কমে গেছে। ঢেঁকি আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য। তাই এ শিল্প রক্ষা এবং সংরক্ষণের জন্য সবাই সহযোগিতা ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

RELATED ARTICLES

Most Popular