দৌলতপুর প্রতিনিধি
ভারতে ফারাক্কার বাঁধের সবকটি গেট খুলে দেওয়ায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদী ঘেরা চরবাসীর মাঝে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। যদিও তারা বন্যার সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে অভ্যস্ত রয়েছে, তারপরও ফারাক্কার বাঁধের ১০৯টি গেটে একসাথে খুলে দেওয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্যা আতঙ্কের খবর ফলাও করে প্রচার করার ফলে চরবাসীর মাঝে উদ্বেগ উৎকন্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। তবে স্বস্থির খবর ভারতে ফারাক্কার বাঁধের সবকটি গেট খুলে দেওয়ার ২৪ ঘন্টা পার হলেও গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধি না পাওয়ায় তা স্থিতাবস্থায় রয়েছে। এনিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাগণ। চরবাসীরা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে বন্যার দেখা মিলে।
এসময় দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী, রামকৃষ্ণপুর, ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। বিশেষ করে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নবাসী বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়ে। ফলে এই দুই ইউনিয়নের অর্ধলক্ষ মানুষ বন্যা মৌসুমে পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করে। তবে এখনও পর্যন্ত তারা বন্যাক্রান্ত না হলেও ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে গত জুলাই মাসে কয়েক দফা পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়। আগষ্টের মাঝামাঝিতে পানি কিছুটা কমতে শুরু করে। তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা ও পুনরায় পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ফারাক্কার বিরুপ প্রভাবে বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী ঘেঁষা উপজেলার চার ইউনিয়নের পদ্মাপাড়ের মানুষ।
ইতিমধ্যে চরের বেশ কিছু আবাদি জমি পানিতে তলিয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতিও নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়রনের চল্লিশপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সোহেল আহমেদ জানান, ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ায় পদ্মা নদীর পানি বৃুদ্ধি পাবে। ফলে নদী তীরবর্তী মানুষ এবারও বন্যার আশংকা বরছেন। বন্যা কবলিত হলে উপজেলার চিলমারী, রামকৃষ্ণপুর, মরিচা ও ফিলিপনগর ইউনিয়নের পদ্মা পাড়ের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে চরের বেশকিছু আবাদি ও ফসলের মাঠ। দৌলতপুর উপজেলার চিলমারীর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধি পায়নি।
এখনও আগের অবস্থায় রয়েছে, তবে তা এখনো লোকালয়ে প্রবেশ করেনি। কিছু নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে চরের আবাদি ফসল ডুবেছে। রামকৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল জানান, নতুন করে পদ্মা নদীর বাড়েনি। নদীর পানি আগের অবস্থায় রয়েছে। এতে এখনও কোন ক্ষয় ক্ষতি হয়নি। পানি উন্নয় বোর্ডের (পাউবো) তথ্য মতে, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পায়নি।
পদ্মা নদীর দৌলতপুরের ভাগজোত পয়েন্টে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পানির উচ্চতা ছিল ১৩ দশমিক ৬২ সেন্টিমিটার যা বিপদ সিমার ২ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার নীচে। তবে গতকাল মঙ্গলবার সকালর দিকে হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১১ দশমিক ৯৯ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছিল যা বিপদ সীমার ১ দশমিক ৮১ সেন্টিমিটার নীচে। পাবনা ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ার খবরে নদী তীরবর্তী পদ্মাপাড়ের মানুষকে আতঙ্কিত না সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
বন্যার বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান জানান, বন্যার জন্য আমাদের আগাম প্রস্তুতি নেওয়া আছে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের উঁচু ভবনগুলো আশ্রয়কেন্দ্র করা হবে। তবে নদীর পানির উচ্চতা স্বাভাবিক রয়েছে। ভারতের ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়ায় বন্যার আশংকা করা হচ্ছে।
সম্পাদকঃ মোঃ আব্দুল বারী।
© ভোরের কন্ঠ - ২০২৪