মোঃমিজানুর রহমান,গাইবান্ধা।
ভারতীয় উপমহাদেশের রাসেলের ভাইপার / কেউ বলে চন্দ্রবোড়া ভয়ঙ্কর চারটি সাপের একটি। প্যাট্রিক রাসেল ১৭৯৬ সালে তার অ্যান অ্যাকাউন্ট অফ ইন্ডিয়ান সারপেন্টস, কালেক্টেড অন দা কোস্ট অফ করোমান্ডেল বইয়ে চন্দ্রবোড়া সম্পর্কে লিখেছেন ও তার নাম অনুসারে এটি রাসেলের ভাইপার নামেও পরিচিত। চন্দ্রবোড়া ১৭৯৭ সালে জর্জ শ এবং ফ্রেডেরিক পলিডোর নোডার কর্তৃক বর্ণিত হয়। ১৮ শতকে সাপের ক্লাসিফিকেশনের সময় বিজ্ঞানীরা উনার নাম জুড়ে দেয় সাপগুলোর সাথে। বিভিন্ন জেলায় এই সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়, কিন্তু এখন পর্যন্ত গাইবান্ধা জেলায় এরকম কোন নজির দেখা যায় নাই।
বিলুপ্ত বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার ক্রমেই যেন রাজত্ব গেড়ে বসতে শুরু করেছে দেশব্যাপী। বরেন্দ্র এলাকা ছেড়ে সাপটির খোঁজ মিলছে বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুর এমনকি ঢাকার আশপাশেও। অস্তিত্ব মিলেছে ২৯ জেলায়। চলতি বছর এ সাপের কামড়ে মারা গেছেন ১০ জন।
দেশের সব অঞ্চলে শিয়াল, গুইসাপ ও বেজি দেখলেই লোকজন মেরে ফেলছেন। তারা জানেন না, এটির উপকারিতা কত! এ কারণেই রাসেল ভাইপারের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। কারণ তার খাদক নেই। ইকো সিস্টেমে ব্রেক হয়ে গেছে।
ভয়ঙ্কর বিষাক্ত সাপ রাসেল ভাইপার। এই সাপে কামড় দেওয়ার ২ ঘণ্টার মধ্যে এন্টিভেনম ভ্যাকসিন দিতে হবে। না হলে ওই সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
২০১৮ সালের শেষের দিকে পদ্মার চর হতে অজগর সাপ ভেবে একটি রাসেলস ভাইপারকে ধরে বাড়িতে নিয়ে আসে এক ব্যক্তি। এরপর সেটির কামড়ে তিনি মারা যান।
২০২০ সালে সদর উপজেলার মেঘনা নদীর তীরের বাংলাবাজার ইউনিয়নের সরদার কান্দি গ্রামের আবুল হোসেনের মাছ ধরা চাইয়ে ধরা পড়ে রাসেলস ভাইপার। সে বছর ২৩ আগস্ট পদ্মা তীরবর্তী টঙ্গীবাড়ি উপজেলায় পাঁচগাও ইউনিয়নের দশত্তর গ্রামের রাসেল ঢালী নামের এক ব্যক্তি একটি রাসেলস ভাইপার সাপ আটক করে। ওই বছর ২৯ নভেম্বর আরো একটি রাসেলস ভাইপার সাপ আটক করে পদ্মা তীরবর্তী দিঘিরপাড় ইউনিয়নের মিতারা এলাকার অপু বিশ্বাস। পরে সেটি চট্টগ্রামের ভেনাস সেন্টারের কর্মকর্তারা নিয়ে যায়।
২০২৩ সালের জুলাই মাসে লৌহজংয়ের কনকসার গ্রামের টিংকু বর্মণ ঘরে খাবার খাওয়ার সময় রাসেলস ভাইপারের আক্রমণের শিকার হন। তবে দ্রুত চিকিৎসা নিয়ে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। ওই বছর নভেম্বরে বেজগাঁও ইউনিয়নে সুন্দিসার গ্রামের একটি চর থেকে রাসেলস ভাইপার আটক করে গ্রামবাসী। একই মাসে সদরের মেঘনা নদীর তীরে কালির চলে রাসেলস ভাইপারের আক্রমণের শিকার হন আরো এক ব্যক্তি। ঢাকার দোহারের চরাঞ্চলে বিষধর রাসেল ভাইপার সাপের আনাগোনার খবরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ইদানীং রাসেল’স ভাইপার নিয়ে কিছু ভুলভাল পোস্ট এবং সংবাদ ফেসবুকে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যা জনমনে ভুল ধারণা এবং আতঙ্কের জন্ম দিচ্ছে। যার দরুন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি মানুষ-ও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে,
শুধু হাসাপাতালে দেরীতে যাওয়া, ওঝার কাছে গিয়ে সময় নষ্ট করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী না চলা বা কনসাল্টের মধ্যে না থাকার কারণেই রুগী মা-রা পড়ে। রাসেল’স ভাইপারের কামড়ে সুস্থতার হার ৭০% এর মতো প্রায়, যদি সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নেয় তবেঁ সুস্থতার হার ৯০% এর চেয়ে বেশি তথ্যানুসারে।
এঁরা বাচ্চা গড়ে ৩৫টি করে দেয়, তাও-ও প্রাকৃতিক বা ইকোসিস্টেমের কারণে অর্ধেক বাচ্চা এমনিতেই মা-রা পড়ে, যেমন: চিল, পেঁচা, শিয়াল, বনবিড়াল, বানর, গুইসাপ, বেঁজি ইত্যাদি সহ আরে বেশ কিছু প্রাকৃতিক কারণ।
স্রষ্টা আমাদের প্রকৃতির সব কিছুই প্রকৃতি তথা আমাদের প্রয়োজনে সৃষ্টি করেছেন। এঁরা আমাদের ইকোলজি যেমন ব্যালেন্স করে, তেমন আমাদের বিভিন্ন রক্তবাহিত জটিল এবং কঠিন রোগের ঔষধ-ও প্রদান করে।
হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণকারী Captopril-জাতীয় ঔষধ, এমনকি বেথা নাশক বা পেইন কিলারের মতো মেডিসিন তৈরীতেও এ সাপের ভেনম ব্যাবহার হয়।
সর্বোপরি সাপ’সহ সকল প্রাণীরা আমাদের ইকোলজি বা প্রকৃতির অংশ। একমাত্র সঠিক তথ্য এবং ধারণা-ই আমাদের সুরক্ষিত রাখতে পারে। সাপে কাটলে ওঝা নয়, হাসপাতালে চিকিৎসা হয়।
সম্পাদকঃ মোঃ আব্দুল বারী।
© ভোরের কন্ঠ - ২০২৪